কাশ্মীর ঘিরে নতুন করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে অবশেষে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গে আলাপ হয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের। এর আগে বুধবার (৩০ এপ্রিল) দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ফোনালাপ হয়।
সেখানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। জয়শঙ্কর তার কথোপকথনে পঁহেলগাও হামলার প্রসঙ্গ তোলেন। রুবিও ভারতকে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ আলোচনা এমন সময়ে হয়েছে, যখন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে টানা সাত দিন ধরে গুলিবিনিময় চলছে। জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা, উরি এবং আখনূর সেক্টরে গোলাগুলির এসব ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার উত্তেজনা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে নজর রাখছে চীন। এ নিয়ে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে কথা বলেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
যেকোনো পরিস্থিতিতে চীন পাকিস্তানের পাশে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনের কনসাল জেনারেল ঝাও শিরেন। বৃহস্পতিবার (১ মে) লাহোরে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কেন্দ্রীয় পাঞ্জাব শাখার নেতাদের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) বর্তমান মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিক।
এর আগে বুধবার (৩০ এপ্রিল) কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান ও ভারতের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর দু’দেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণে ধ্বংস হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট ও বাঙ্কার।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বুধবার (৩০ এপ্রিল) ইসলামাবাদে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পাকিস্তান আগবাড়িয়ে উসকানিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেবে না। তবে উসকানি দেওয়া হলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।’ আগেরদিন মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটেও তিনি একই ধরনের কথা বলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ মহড়া অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি কৌশলগত যুদ্ধ পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আধুনিক সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে। নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে বৃহস্পতিবার (১ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জিও নিউজ।
এদিকে পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ যখন সামরিক সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখন সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটায় নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সেখানে বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। বুধবার (৩০ এপ্রিল) বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় তারা ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের এক কোটির বেশি মানুষের বসবাস পাকিস্তানে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
খুলনা গেজেট/এমএনএস